ওয়েন্ডিং পরিভাষা (Welding Terminology )

এসএসসি(ভোকেশনাল) - জেনারেল মেকানিক্স- ২ - দ্বিতীয় পত্র | NCTB BOOK

ওয়েল্ডিং এর কাজ শিখতে এসে একজন শিক্ষানবিস বা নবীন ওয়েন্ডারকে কতিপয় শব্দ বার বার শুনতে হয়। উক্ত শব্দগুলির পরিভাষা জানা এবং বুঝতে পারা তার জন্য অতি প্রয়োজন। এ দিক বিবেচনা করে নিচে কতিপয় বহুল প্রচলিত ওয়েন্ডিং পরিভাষা সম্পর্কে লিখা হয়।

২.৬.১ ওয়েল্ডিং পরিভাষাসমূহ

বেস মেটাল বা প্যারেন্ট মেটাল (Base Metal):

যে ধাতুকে ওয়েন্ডিং করা হচ্ছে তাকে বেস মেটাল বা প্যারেন্ট মেটাল বলে ।

ফিলার মেটাল (Filler Metal) : পরিপুরক ধাতু হিসেবে ওয়েল্ডিং এর সময় জোড়া স্থানে এটা প্রয়োগ করা হয়।

রান (Run ) : ইলেকট্রোড বা রোপাইপকে একবার মূলধাতুর উপর দিয়ে টেনে নেয়ার পর, বেসমেটালের উপর যে ধাতু জমা হয় তাকে রান বলে। একে অনেক সময় বিডও বলা হয়।

রুট (Route): ওয়েল্ডিং করার জন্য প্রস্তুতকৃত ধাতু খন্ডদ্বয়ের মুখোমুখি মিলন স্থলকে রুট বলে।

ফিলেট ওয়েল্ড (Fillet Weld): ত্রিকোণাকৃতি প্রস্থচ্ছেদ বিশিষ্ট ওয়েল্ডিংকে ফিলেট বলে।

লেগলেংথ (Leg Length): ফিলেটের রুট হতে টো পর্যন্ত দূরত্ব।

ছোট থিকনেস (Throat Thickness) : রুট হতে ‘টো’দ্বয়ের মধ্যবর্তী বিন্দুদ্বয়ের লম্ব দূরত্ব।

 ট্যাক ওয়েল্ড (Tack Weld): যে ধাতব খন্ড দুটির উপর ওয়েন্ডিং করা হবে সে খন্ড দুটি যেন তাপের প্রভাবে বা অন্য কোনো বস্তুর ধাক্কা লেগে সরে যেতে বা বাঁকা হতে না পারে সেজন্য পাত দু'টিতে ছোট ছোট রানের ওয়েল্ডিং করা হয় তাকে ট্যাক ওয়েল্ডিং বলে।

আর্ক (Arc): ইলেকট্রোড এবং জবের কারেন্ট বাহিত ধাতব বাষ্পের একটি স্রোত। লং আর্ক (Long Arc): আর্ক এর দৈর্ঘ্য বেশি হলে তাকে লং আর্ক বলে। শর্ট আর্ক (Short Arc): যে আর্কের দৈর্ঘ্য কম তাকে শর্ট আর্ক বলে, এটি সাধারণত ইলেকট্রোডের কোরের ব্যাসের সমান হয়।

হিট অ্যাফেকটেড জোন (Heat Affected Zone)

ওয়েন্ডিং বা কাটিং কাজের সময় তাপের প্রভাবে জবের যে অংশটুকু ধাতুর ভিতরের গঠনের পরিবর্তন হয় তাকে হিট অ্যাফেকটেড জোন বলে।

ফিউশান জোন (Fusion Zone): মূল ধাতুর যে অংশটুকু উত্তাপের প্রভাবে গলে ওয়েল্ড মেটালের সাথে

মিশে যায় সে অংশটুকুকে ফিউশান জোন বলে ।

ফ্রান্স (Flux): এটা এক প্রকার রাসায়নিক যৌগিক পদার্থ যা ওয়েল্ডিং, সোল্ডারিং বা ব্রেজিং এর সময় প্রয়োগ করা হয়। এটা জোড়াস্থানে বায়ুর অক্সিজেনের সাথে ক্রিয়া করে অক্সাইড তৈরিতে বাধা দেয় ও জোড়াকে শক্ত করে দ্রুত গলন কাজ সমাধা করে।

প্রিহিটিং (Pre Heating): ওয়েল্ডিং করার পূর্বে মূল ধাতুকে তাপ প্রয়োগ করাকে প্রিহিটিং বলে।

পোষ্ট হিটিং (Post Heating): ওয়েল্ডিং করার পর জবে তাপ প্রয়োগ করাকে পোষ্ট হিটিং বলে।

২.৭ ওয়েল্ড জোড়ার উপরিতল ও পার্শ্বদেশ প্রস্তুতি (Surface and Edge Preperation for Weld Joint)

যখন ধাতবপাতের বা জবের গুরুত্ববৃদ্ধি পায় তখন উহার পার্শ্বদেশ প্রস্তুত না করলে ভাল পেনিষ্ট্রেশন হয় না ১.৫ মিলিমিটার হতে ৬ মিলিমিটার পুরুত্বের ধাতুকে ওয়েল্ডিং করতে জোড়ার পার্শ্বদেশ প্রস্তুত না করলেও কাজ চলতে পারে, তবে ৬ মিলিমিটার গুরুত্বের বেশী সকল জবের পার্শ্বদেশ অবশ্যই প্রস্তুত করতে হবে। উপযুক্তভাবে পার্শ্বদেশ প্রস্তুত না করলে জোড়ার শক্তি সন্তোষজনক হবে না এবং জোড়া বেঁকে যাওয়ার সম্ভাবনাও থাকবে।

কোনো জোড়ের পার্শ্বদেশ প্রযুক্তির পূর্বে বিবেচনা করতে হবে তা কোন পদার্থের তৈরি, কি প্রকারের জোড়া হবে কোন পদ্ধতির ওয়েল্ডিং করা হবে ইত্যাদি।

জোড়ার পার্শ্বদেশ প্রস্তুতির পদ্ধতিগুলি হল:

• গ্রাইন্ডিং করে (Grinding )

ফাইলিং করে (Filing)

• চিপিং করে (Chipping)

• আর্ক কাটিং প্রক্রিয়ায় (Are Cutting)

গ্যাস কাটিং প্রক্রিয়া (Gas Cutting)

প্লাজমা কাটিং (Plasma Cutting)

শিয়ার মেশিনে কেটে (Shearing)

কখনও কখনও জোড়ার পার্শ্বদেশ প্রস্তুতির কাজ একাধিক পদ্ধতির সমন্বয়ে করা হয়। যেমন চিপিং করার পর গ্রাইন্ডিং করে, অথবা চিপিং করার পর ফাইলিং করে।

২.৭.১ পার্শ্বদেশ প্রভুতির পদ্ধতি বর্ণনা

(ক) ছোট আকৃতির জবগুলিকে হাতে ধরে গ্রাইন্ডিং মেশিনে গ্রাইন্ডিং করে নিলেই চলে। কিন্তু বড় জৰ অৰ্থাৎ যে জবকে নাড়ানো, চড়ানো অসুবিধাজনক সেখানে পোর্টেবল হ্যান্ড গ্রাইন্ডার ব্যবহার করে কাজ করতে হয়।

চিত্র নং ২.১৮ পোর্টেবল হ্যান্ড গ্রাইন্ডার যারা পার্শ্বদেশ প্রস্তুত

(খ) ফাইলিং করে জোড়ার পার্শ্বদেশ প্রস্তুতিতে ইহা অত্যন্ত উপযুক্ত পদ্ধতি। যে ক্ষৰকে ভাইসে ৰাখা সম্ভ সেটিকে ভাইসে ৰেখে ফাইল দিয়ে ধাতুর করে পার্শ্বদেশ প্রস্তুত করা হয়।

কিন্তু ভাইস রাখা না গেলে জবকে সুবিধাজনক অবস্থায় নিয়ে ফাইলিং করে পার্শ্বদেশ প্রভুত করা যায়।

(গ) চিপিং করে মোটা জব অর্থাৎ বেশ খানিকটা ধাতু যেখানে। কেটে জোড়ার পার্শ্বদেশ প্রস্তুত করতে হবে সেখানে চিপিং করে পার্শ্বদেশ প্রস্তুত করতে হয়। এই পদ্ধতিতে কোন চিজেলের মাথায় হাতুড়ী দিয়ে আঘাত করে ধাতু কর্তন করতে হৰে হয়। কর্তনের পূর্বে অবশ্যই যে স্থানের মেটাল কাটতে হবে সে স্থানে ভালভাবে মার্কিং করে নিতে হবে। চিপিং করার পর অধিকাংশ ক্ষেত্রে গ্রাইন্ডিং অথবা ফাইলিং করার প্রয়োজন হয়।

(ঘ) আর্ক কাটিং পদ্ধতি

(১) মেটাল আর্ক কাটিং পদ্ধতি

আর্ক ওয়েল্ডিং এ যেমন ধাতু জোড়া দেওয়া হয় তেমনি কাটাও যায়। এই পদ্ধতিতে কাটার সময় কারেন্টের পরিমাণ ওয়েন্ডিং করার সময়ের চেয়ে বেশী লাগে এবং কাটার কাজে ইলেকট্রোড ব্যবহৃত হয় তার ব্যাস ৪ মিলিমিটার এর কম হওয়া উচিত নয়। ওয়েল্ডিং পদ্ধতির মত আর্ক কাটিং পদ্ধতিতেও মোটা ধাতু কাটতে বেশী কারেন্ট ও বেশী ব্যাসের ইলেকট্রোন্ড এবং চিকন বা অল্প গুরুত্বের ধাতু কাটতে কম কারেন্ট ও খানিকটা চিকন ইলেকট্রোড ব্যবহার করতে হয়।

(২) অগ্নি আর্ক কাটিং পদ্ধতি

যে সমস্ত জবের পার্শ্বদেশ সাধারণ মেটালিক আর্ক কাটিং অথবা গ্যাস কাটিং পদ্ধতিতে কাটা অসুবিধাজনক যেমন হাই ক্রোমিয়াম ভীল, ক্রোমিয়াম নিকেল ষ্টীল, স্টেইনলেস ষ্টীল, ব্রোঞ্জ, কপার, এলুমিনিয়াম, ইত্যাদি সেই সকল ধাতুকে সুবিধাজনকভাবে এই পদ্ধতিতে কাটা যায়। এই পদ্ধতিতে ব্যবহৃত ইলেকট্রোভটির মাঝে একটি ছিদ্র থাকে ঐ ছিদ্র পথে ধাতু কাটার জন্য প্রয়োজনীয় অক্সিজেন সরবরাহ করা হয়। ছিদ্র বিশিষ্ট ইলেকট্রোভটি আর্ক সৃষ্টি করে এবং আর্কের উত্তাপে ধাতু গলে। হলো ইলেকট্রোডের মাঝ দিয়ে যে অক্সিজেন সরবরাহ করা হয় সেই অক্সিজেনের চাপে ধাতু কাটার কাজ সম্পন্ন হয়।

(ঙ) স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে গ্যাস কাটিং প্রক্রিয়া:

স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে অক্সিজেন এবং অ্যাসিটিলিন গ্রাসের শিখার সাহায্যে ধাতুকে উত্তপ্ত করে তখন অর্ধগলিত ধাতু অক্সিজেনের সাথে বিক্রিয়া করে দ্রুত অক্সাইড তৈরি করে, অক্সাইডের গলন তাপমাত্র মূলধাতুর চেয়ে কম লাগে তাই ঐ সময় উচ্চচাপে বিশুদ্ধ অক্সিজেন সরবরাহ করলে অক্সাইড যুক্ত ধাতু ছিটকে পড়ে এবং ধাতু কর্তন সম্পন্ন হয়। এই পদ্ধতিতে জবের পার্শ্বদেশ প্রভুত করতে সময় কম লাগে।

(চ) প্লাজমা কাটিং

সাধারণত পদার্থ যখন ঠান্ডা থাকে তখন কঠিন, এটিকে উত্তপ্ত করলে তরুল, এটিকে আরো উত্তপ্ত করলে এটি গ্যাসীয়/বায়বীয় এবং এটিকে যখন ভীষন ভাবে উত্তপ্ত করা হয় তখন এটি প্লাজমাতে পরিণত হয়। তাপমাত্রা বৃদ্ধি পদার্থের অণু, পরমাণু সমূহকে পরস্পর হতে বিচ্ছিন্ন হতে বা দূরে সরে যেতে চাপ দেয়। আর এই ভাবেই অত্যধিক ভাপ গ্যাসকে প্লাজমাতে রূপান্তর করে।

চিত্র: ২.২২ প্লাজমা কাটিং পার্শ্বদেশ প্রভুত

প্লাজমা আর্ক কাটিং এর সময়, প্লাজমা টর্চের ভেতরে একটি টাংস্টেন ইলেকট্রোডের মাধ্যমে প্রচন্ড উত্ত একটি আর্ক সৃষ্টি হয়। এই উষপ্ত আর্কের সংস্পর্শে উচ্চ চাপে বাভাসকে নজেলের মাধ্যমে প্রবাহিত করা হলে এটি উচ্চ তাপের সংস্পর্শে এসে আয়োনাইজড হয়ে প্লাজমাতে রূপ নেয়। আর এই উত্তপ্ত প্লাজমা একটি সংকীর্ণ পথ/নজেল দিয়ে ধাতু কাটার স্থানে প্রবাহিত করা হয়। এই উচ্চ ভাগে (প্রায় ২০০০০ডিগ্রী সে:) ও চাপযুক্ত আয়োনাইজড গ্যাস বা প্লাজমা অতি সহজেই ধাতু কর্তন করতে সক্ষম হয়। প্লাজমা আর্ক কাটিং এ টর্চ টিপকে ঠান্ডা রাখার জন্য ওয়াটার কুলির ব্যবস্থা রাখা হয়।

(ছ) শিয়ার মেশিনে কেটে

অল্প গুরুত্বের ধাতুকে ব্রেঞ্চ শিয়ার মেশিনে কেটেও জোড়া স্থানের পার্শ্বদেশ প্রস্তুত করা যায়,

তবে ওয়েল্ডিং ওয়ার্কশপে জোড়া পার্শ্বদেশ প্রস্তুতির জন্য চিপিং ফাইলিং এবং গ্রাইন্ডিং পদ্ধতি খুব বেশী ব্যবহৃত করা হয়। জোড়ার পার্শ্বদেশ প্রস্তুতির চিত্র নিচে দেখান হল । অ্যাঙ্গেল অৰ বিভেল (Angle of bevel)

V- Preparation for SMAW on MS Plates 30° to 35°

U- Preparation for SMAW on MS Plates 80 to 12°

V- Single bevel-50" J-Preparation 10° to 20°

Content added || updated By
Promotion